বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে মূলত পাশ্চাত্য সংস্কৃতির একটি উৎসব। প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি এই দিনটি প্রেম ও ভালোবাসা প্রকাশের উৎসব হিসেবে পালন করা হয়। বিশ্বজুড়ে দিনটি বেশ জনপ্রিয় হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে এই দিবসটি পালনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ইসলামিক মূল্যবোধের আলোকে ভালোবাসা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এর সঠিক দিকনির্দেশনাও অপরিহার্য।
ভালোবাসার প্রকৃত ধারণা ইসলাম কী বলে?
ইসলামে ভালোবাসা একটি পবিত্র অনুভূতি। এটি আল্লাহ তাআলার দান, যা মানুষের মনকে নরম ও দয়ালু করে তোলে। তবে ইসলামে ভালোবাসা সবসময় পরিচ্ছন্ন, নিয়ন্ত্রিত এবং শরিয়তের সীমারেখার মধ্যে থাকার নির্দেশনা দেয়।
কুরআন ও হাদিসের আলোকে ভালোবাসার গুরুত্ব:
-
আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা: ইসলামের প্রথম ও প্রধান ভালোবাসা হলো আল্লাহর প্রতি। তাঁর প্রতি আনুগত্য এবং ভালোবাসা মুমিনের ঈমানের মূল ভিত্তি।
-
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা: রাসুল (সা.) বলেছেন, “তোমাদের কেউ সত্যিকারের মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা-মাতা, সন্তান এবং সকল মানুষের চেয়ে প্রিয় হয়ে উঠি।” (সহিহ বুখারি)
-
পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন ও মুমিন ভাইদের প্রতি ভালোবাসা: ইসলাম পারিবারিক ভালোবাসা এবং সমাজে পরস্পর সম্মান ও ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়ার গুরুত্ব আরোপ করে।

ভ্যালেন্টাইন ডে: ইসলামের দৃষ্টিকোণ
ভালোবাসার নামে ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করা ইসলামের দৃষ্টিতে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। এর পেছনে কিছু কারণ রয়েছে—
১. ইতিহাস ও উৎস
ভ্যালেন্টাইন ডে-এর উৎপত্তি মূলত রোমান উৎসব এবং পরে খ্রিস্টান ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি ইসলামি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
২. শরিয়তের সীমালঙ্ঘন
এই দিনে প্রায়শই প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। পর্দাহীনতা, অনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং অশালীনতাকে উৎসাহিত করার জন্য এ দিনটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত।
৩. ভালোবাসার ভুল ধারণা
ভ্যালেন্টাইন ডে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হলেও এটি আসলে একটি বাণিজ্যিক উৎসব। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোবাসা একটি সার্বজনীন অনুভূতি, যা বছরের নির্দিষ্ট একটি দিনে সীমাবদ্ধ নয়।

ইসলামে ভালোবাসা প্রকাশের সঠিক উপায়
ইসলামে ভালোবাসা প্রকাশের জন্য আছে পবিত্র ও গ্রহণযোগ্য পন্থা। নিচে কিছু করণীয় উল্লেখ করা হলো—
- আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসুন: ইসলামে প্রত্যেকটি সম্পর্কই আল্লাহর সন্তুষ্টির ভিত্তিতে গড়ে উঠতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা, পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধা ও সন্তানের প্রতি স্নেহই প্রকৃত ভালোবাসা।
- হালাল সম্পর্ক গড়ে তুলুন: বিয়ের মাধ্যমে হালাল সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা ইসলামে প্রশংসনীয়। প্রিয় মানুষকে বিয়ের মাধ্যমে জীবনসঙ্গী করে নেওয়াই হলো প্রকৃত ভালোবাসার প্রতীক।
- পরিবারকে সময় দিন: পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করার জন্য পরিবারকে সময় দিন এবং একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করুন।
- উপহার বিনিময় করুন: রাসুল (সা.) বলেছেন, “উপহার আদান-প্রদান করো, তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।” (সহিহ বুখারি)
মুসলিম যুবকদের করণীয়
বর্তমান সময়ে তরুণ-তরুণীরা ভ্যালেন্টাইন ডে-এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইসলামি জীবনধারার মূলনীতি ভুলে যাচ্ছে। তাদের জন্য কিছু পরামর্শ—
- শরিয়তের নিয়ম মেনে চলুন: ইসলাম আমাদের সবসময় চরিত্রগত পবিত্রতা বজায় রাখতে নির্দেশ দেয়।
- ইসলামি জ্ঞান অর্জন করুন: ভালোবাসার আসল ধারণা এবং ইসলামের শিক্ষার আলোকে জীবন পরিচালনা করুন।
- বিনোদনের হালাল মাধ্যম বেছে নিন: বিনোদন হতে পারে, তবে তা যেন ইসলামি আদর্শের বাইরে না যায়।
- সামাজিক দায়িত্ব পালন করুন: পরিবার, সমাজ এবং উম্মাহর কল্যাণে কাজ করুন।

ইসলামে প্রকৃত ভালোবাসা উদযাপন
ভালোবাসা দিবসকে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে উদযাপন করতে চাইলে:
- পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন করুন।
- অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়ান।
- দুঃস্থ ও অসহায়দের সাহায্য করুন।
- কুরআন পড়ুন এবং রাসুল (সা.)-এর জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন।
ভালোবাসা ইসলামি জীবনধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে এর প্রকাশ হতে হবে পবিত্র, সৎ এবং ইসলামের সীমারেখার মধ্যে। ভ্যালেন্টাইন ডে পালনের পরিবর্তে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা অনুযায়ী ভালোবাসা প্রকাশ করা উচিত। প্রকৃত ভালোবাসা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হোক এবং তার নির্দেশিত পথেই হোক।